1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
খেলাধুলাফ্রান্স

অলিম্পিকে স্বর্ণজয়ীদের বোনাস নিয়ে বিতর্ক

২৩ এপ্রিল ২০২৪

বিশ্বের অন্যান্য অ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতার নিয়মের বাইরে গিয়ে অলিম্পিকে পদকজয়ীদের দেওয়া হবে বাড়তি বোনাস৷ এর সপক্ষে অনেকে থাকলেও সমালোচকদের মতে, এই সিদ্ধান্ত অলিম্পিকের চেতনাবিরোধী৷

https://p.dw.com/p/4f5Lz
টোকিও অলিম্পিকের স্বর্ণজীয় মালাইকা মিথাম্বো
প্যারিস অলিম্পিকের স্বর্ণজয়ীদের জন্য ৫০ হাজার মার্কিন ডলার বোনাস বরাদ্দ থাকবে৷ছবি: Anke Waelischmiller/Sven Simon/picture alliance

ওয়ার্ল্ড অ্যাথলেটিক্স সংস্থার একটি সিদ্ধান্ত অ্যাথলেটিক্সের দুনিয়া কাঁপিয়ে দিয়েছে৷ গত সপ্তাহে, এই সংস্থাটি জানায় যে আসন্ন প্যারিস গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের মোট ৪৮টি বিভাগে স্বর্ণজয়ীদের জন্য ৫০ হাজার মার্কিন ডলার (৫৪ লাখ টাকা) বোনাস বরাদ্দ থাকবে৷ এবারের অলিম্পিকের আসর ২৬ জুলাই থেকে ১১ আগস্ট পর্যন্ত৷

২০২৮ সালের অলিম্পিক, যেটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লস এঞ্জেলেসে আয়োজিত হবে, সেই আয়োজনে রৌপ্য ও তাম্র পদক জয়ীদের জন্যেও বরাদ্দ থাকবে এমন বোনাস, জানায় সংস্থাটি৷ এই প্রথম, আধুনিক অলিম্পিকের ১২৮ বছরের ইতিহাসে কোনো একটি নির্দিষ্ট খেলার বৈশ্বিক সংগঠন এমন বোনাস চালু করেছে৷

ওয়ার্ল্ড অ্যাথলেটিক্সের প্রেসিডেন্ট সেবাস্টিয়ান কো বলেন, ‘‘আমার মতে, কোনো একটা জায়গা থেকে শুরু করাটা গুরুত্বপূর্ণ৷ এটাও গুরুত্বপূর্ণ যে আমাদের খেলোয়াড়রা যে আর্থিক লাভ নিয়ে আসেন, তার কিছুটা সরাসরি তাদের কাছে পৌঁছানো উচিত, যারা এই খেলাকে বিশ্বমানের একটি আয়োজনে পরিণত করেন৷''

কো নিজেও ১৯৮০ ও ১৯৮৪ সালে দেড় হাজার মিটার বিভাগে স্বর্ণ পদক জেতেন৷ তার কাছ থেকে এমন বক্তব্য আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি বা আইওসি-সহ বিভিন্ন ক্রীড়া পরিচালনা সংস্থা হয়তো আশা করেননি৷

সাইক্লিঙের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা ইউসিআই ইতিমধ্যে এবিষয়ে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করে৷ সংস্থাটির প্রেসিডেন্ট ডেভিড লাপারটিয়েন্ট বলে, ‘‘অলিম্পিকের চেতনা মানেই ভাগাভাগি করা, যাতে বিশ্বজুড়ে আরো অনেক অ্যাথলিটরা যোগদান করতে পারেন৷ শুধু শীর্ষ অ্যাথলিটদের জন্য নয়, অর্থ ভাগাভাগি করে দেওয়া হোক৷ যদি শুধু শীর্ষ অ্যাথলিটদের দিকেই টাকা ঢালা হয়, বিশ্বের বহু অ্যাথলিটদের জন্য নানা রকমের সুযোগ হারিয়ে যাবে৷''

খেলার মধ্যে বৈষম্য যেমন

আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির মডেলের ভিত্তি সংহতি৷ অলিম্পিক থেকে যা আয় হয়, তার প্রায় ৯০ শতাংশই যায় অলিম্পিক আন্দোলনের সাথে যুক্ত বিভিন্ন সংগঠনের কাছে৷ বিশেষ করে, এই অর্থের বড় অংশ পান বিভিন্ন ক্রীড়া সংগঠন ও দেশের জাতীয় অলিম্পিক কমিটিরা৷ বাকি অর্থ দিয়ে সুইজারল্যান্ডের লুজানে অবস্থিত অলিম্পিক জাদুঘর ও অলিম্পিকের কমিটি ব্যবস্থাপনার খরচ চালানো হয়৷

২০২১ সালের অলিম্পিকের পর, আইওসি প্রায় ৫৪০ মিলিয়ন ডলার ২৮টি বিশ্ব ফেডারেশনের মধ্যে ভাগ করে দেয়৷ সবচেয়ে বেশি অর্থ পায় ওয়ার্ল্ড অ্যাথলেটিক্স, প্রায় ৪০ মিলিয়ন ডলার৷ সবচেয়ে কম আর্থিক সাহায্য পাবার খাতায় আছে তায়কোয়ানডো, গলফ ও রাগবি, যারা পেয়েছে ১৩ মিলিয়ন ডলার করে৷

ব্রিটিশ রোয়িং তারকা স্টিভ রেডগ্রেভ এই বৈষম্য বিষয়ে বলেন, ‘‘বেশিরভাগ খেলার মানুষ এই দিকটা ধরতে পারবে না৷ তারা এটাকে দুই ধাপের একটি প্রক্রিয়ায় পরিণত করছে৷''

টেনিস দুনিয়ার পরিচালন সংস্থা আইটিএফ ডয়চে ভেলেকে বলে যে তারা কেবল তাদের কাজের অভিমুখ বদল করবে, যদি প্রয়োজন পড়ে, তাও আইওসি ও এএসওআইএফ-এর মতো সংগঠনের সাথে আলোচনার ভিত্তিতেই৷

তারা বলেন, ‘‘যে খেলোয়াড়রা অলিম্পিকে অংশ নেন, তাদের জন্য অলিম্পিকের পদক জেতার জন্য লড়াইয়ের বিষয়টা সত্যিই সম্মানের ও এটাই তাদের মূল প্রাপ্তি হয়ে থাকে৷ এই ধারাকে যদি ভবিষ্যতে বদলাতে হয়, তবে তা অবশ্যই আইওসি ও এএসওআইএফ-এর সাথে আলোচনার মাধ্যমে করা হবে৷''

বাস্কেটবল সংস্থা ফিবা জানায় যে ‘‘পদকের সাথে অর্থ পুরস্কার চালু করার কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই৷''

কো ও তার সংস্থার এই ঘোষণা অনেককেই অবাক করেছে৷ ব্রিটিশ অলিম্পিকের নির্বাহী প্রধান অ্যান্ডি অ্যানসন বলেন, ‘‘তারা একটা সমস্যা সৃষ্টি করছে কারণ অন্যান্য খেলার ওপর নজরদারি বাড়বে বা খেলোয়াড়দের থেকে চাপও বাড়তে পারে৷ তারা বলেতেই পারেন যে, আমাদের খেলার কী হবে? কেন ওই খেলার জন্য এটা হবে আর আমাদের জন্য নয়?''

জার্মানির অ্যাথলিটদের সংস্থা আথলেটেন ডয়েচলান্ডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ইয়োহানেস হেরবারের মতে, এই সিদ্ধান্ত ‘‘আইওসি ও অন্যান্য ক্রীড়া সংস্থার জন্য ঘুমভাঙানিয়া ডাকেরসমান, যা অ্যাথলিটদের সৃষ্টি করা আর্থিক লাভের কিছু অংশ তাদের কাছে ফেরাতে পারবে৷''

কিন্তু জার্মান অলিম্পিক স্পোর্টস ফেডারেশনের মতে, ‘‘এটা ওয়ার্ল্ড অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের দায়িত্ব আইওসি থেকে পাওয়া টাকাকে ভাগ করে দেওয়া৷''

সেরা পারফর্মান্সের জন্য বোনাস

অনুদান, জনগণের তহবিল, লটারির আয় ও বিভিন্ন দাতব্য আয়োজন থেকে চলে স্পোর্টহিলফে সংগঠনের কাজ৷ গত ৫০ বছর ধরে জার্মান অ্যাথলিটদের সহায়তা করে আসছে তারা৷

স্পোর্টহিলফের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে প্রায় ২৩ মিলিয়ন ইউরো সব জার্মান খেলোয়াড়দের মধ্যে ভাগ করে দেবে তারা, যা এখন পর্যন্ত এই সংস্থার জন্যেও সর্বোচ্চ অঙ্ক৷ এছাড়া, প্যারিসে জার্মান স্বর্ণ পদক জয়ীদের জন্য বরাদ্দ থাকছে ২০ হাজার ইউরো, রৌপ্য পদক জয়ীদের জন্য ১৫ হাজার ইউরো ও তাম্র পদক জয়ীদের জন্য দশ হাজার ইউরোর বোনাস৷

শুধু শীর্ষ পারফর্মাররাই নন, অষ্টম স্থানে থাকা প্রতিযোগীও পাবেন দেড় হাজার ইউরো৷ বোনাসের এই নিয়ম চালু থাকবে সকল খেলার জন্যেই৷

ডয়চে ভেলেকে স্পোর্টহিলফে জানায়, ‘‘আমাদের স্পোর্টহিলফে বোনাস ট্র্যাক ও ফিল্ড দুই ধরনের অ্যাথলিটদের জন্যেই প্রযোজ্য, তা তারা অন্য যে কোনো উৎস থেকে পুরষ্কৃত হলেও৷''

অর্থাৎ, প্যারিসে যদি কোনো জার্মান অ্যাথলিট স্বর্ণ পদক জেতেন, তিনি পাবেন স্পোর্টহিলফের কাছ থেকে ২০ হাজার ইউরো ও অন্যদিকে, ওয়ার্ল্ড অ্যাথলেটিক্স থেকে পাবেন ৫০ হাজার ইউরো বোনাসও৷

স্টেফান নেসলার/এসএস